চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরুজ চিনিকল। এবার ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে দর্শনা কেরুজ চিনিকলের স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙ্গে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে।
বিগত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সরকারকে ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েও ১৩০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে স্বরণকালের রেকর্ড ভেঙ্গেছে চিনিকলটি।কেরু এ্যাড কোম্পনীর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এফসিএমএ রাব্বিক হাসান জানান, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর যোগদানের পর থেকেই আমি শ্রমিক কর্মচারী ও কৃষকদের পাশে থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করে কেরুকে লাভজনক অবস্থায় আনতে সক্ষম হয়েছি। আখচাষিদের সাথে সভা-সমাবেশ ও প্রশিক্ষণ কার্ অব্যাহত রেখে চলেছি। কৃষকদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করণের পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি আগামীতেও ৯টি চিনিকলের মধ্যে দর্শনা কেরু চিনিকল লাভজনক অবস্থায় আনতে সক্ষম হবো।কেরু অন্যান্য বিভাগে লাভজনক আনতে সক্ষম হয়েছি তেমনি চিনিকলকেও লাভজনক অবস্থায় আনতে সক্ষম হবো বলে আশাবাদী। এ দিকে বাংলাদেশ সরকার কৃষকদের কথা বিবেচনা করেই বারবার আখের মূল বৃদ্ধি করেছে।
চিনি কারখানার দশা যা হোক না কেন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ শিল্প করপোরেশন থেকে প্রতি বছরের আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা বেধে দিতে কমতি করেন না কর্তাবাবুরা। দেশের সবগুলো চিনিকল যখন লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে গভীর জলে হাবুডুবু খাচ্ছে, তখন সরকারকে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব দিয়েও মুনাফা অর্জন করছে কেরুজ কমপ্লেক্স। কেরুজ কমপ্লেক্সে প্রতিষ্ঠাকালের সকল রেকর্ড ভেঙে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরেও মুনাফা অর্জন হয়েছে সর্বচ্ছ। সরকারের রাজস্ব খাতে ১৪০ কোটি ও চিনি কারখানার প্রায় সাড়ে ৬২ কোটি লোকসান পুষিয়েও মুনাফা অর্জন হয়েছে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। যা চিনিকল প্রতিষ্ঠার ৮৮ বছরের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে। কেরুজ কমপ্লেক্স আরও লাভজনক করতে গ্রহণ করা হয়েছে নানামুখি পদক্ষেপ। আধুনিক প্রযুক্তিতে আখ চাষ করায় আগামী মাড়াই মৌসুমে চিনি কারখানায় লোকসানের বোঝা কমতে পারে অনেকাংশে। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরুজ কমপ্লেক্সের বয়স পেরিয়েছে ৮৮ বছর।
জোড়াতালি দিয়েই বারবার আখ মাড়াই মরসুমের কার্যক্রম চালু করা হয়ে থাকে। খানেকটা খুড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনোভাবে শেষ করা হয় আখ মাড়াই কার্যক্রম। লাগাতার যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে নাজেহালে হতে হয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। ভিন্নতায় ডিস্টিলারী কারখানা। ডিস্টিলারি বিভাগে ফরেণ লিকার উৎপাদনে অটোমেশিন স্থাপন করা হয়েছে গত বছরে। পূর্ণতা পাবে দেশীয় মদ বোতলজাতকরণে আধুনিক মেশিন স্থাপন করা হলে। এ ছাড়া মিলের প্রতিটি বিভাগেই উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। চিনি কারখানা বিএমআরই করণ প্রায় শেষের দিকে। তাছাড়া কয়েকটি বিভাগে উন্নয়নের কাজ হয়েছে সম্প্রতিকালে। চিনি কারখানা আধুনিকায়নের কাজ শেষ হলেও কমতে পারে লোকসান।এর পাশপাশি কৃষকরা আখ চাষ বাড়াতে হয়তো লোকসানের রেকর্ড ভেঙ্গে লাভের মুখও দেখতে পারে চিনিকল কারখানা। গত আখ মাঁড়াই মৌসুমে ৫ হাজার ১শ একর জমিতে আখচাষ ছিলো।
যাঁর মধ্যে কৃষকের জমির পরিমান ৩ হাজার ৪৫৫ ও কেরুজ নিজস্ব জমিতে ছিলো এক হাজার ৬৪৫ একর আখ। ৬৫ মাড়াই দিবসে ৭০ হাজার মেট্রিকটন আখা মাড়াইয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত ছিলো। আখ মাড়াইয়ের গড় হার ছিলো এক হাজার ১৫০ মেট্রিকটন। চিনি আহরণের ‘গড় হার নির্ধারণ করা ছিলো ৬ দশমিক শূন্য শতাংশ। চিনি উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ৪ হাজার ২শ মেট্রিকটন। চিনি কারখানা বড় ধরণের তেমন কোন যান্ত্রিক ত্রুটির কবলেও পড়তে হয়নি। গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ৫২ মাড়াই দিবসে আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। সে সময় পর্যন্ত কেরুজ নিজস্ব সহ কৃষকদের প্রায় এক হাজার ৪শ একর জমিতে আখ ছিলো। ওই আখ ২৫ ফেব্রুয়ারিতে বিএমআরই (আধুনিকায়ন) চিনি কারখানায় মাড়াইয়ের মাধ্যমে উদ্বোধন’ করার প্রস্তুতি মূলক রাখা হয়। অবশেষে সে গুড়ে বালি পড়ে। ২৫ ফেব্রুয়ারি আধুনিকায়নকৃত কারখানার পাউয়ার টার্বাইন সমস্যা জনিত কারণে তা সম্ভব হয়নি।
চিনিকল কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ি গত মৌসুমে আখ মাড়াই করা হয়েছিলো প্রায় ৭২ হাজার মেট্রিকটন। চিনি উৎপাদন হয় ৩ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন উৎপাদিত চিনির মধ্যে বিক্রি হয় ২ হাজার ৩৮২ দশমিক ৭৫ মেট্রিকটন। ফলে চিনি কারখানায়। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কর্তৃপক্ষের লোকশান হয়েছে ৬২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এ দিকে ওই অর্থ বছরে কেরুজ ডিস্টিলারী বিভাগে ফরেণ লিকার উৎপাদন হয়েছে ২’ লাখ ৫ হাজার ২২০ কেচ। উৎপাদিত ফরেণ লিকারের মধ্যে বিক্রি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৬৯৮ কেচ। সিএস (দেশীয় মদ) উৎপাদন হয়েছে ২৪ লাখ ৮৯ হাজার প্রুফি লিটার। বিক্রি হয়েছে ২৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৬০ প্রুফ লিটার। ভিনেগার উৎপাদিত হয়েছে ২১ হাজার লিটার। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ফরেণ লিকার ও দেশীয় মদ উৎপাদন বিক্রির পরিমান অনেক গুনে বেশী হলেও গত অর্থ বছরে মুনাফা অর্জনের পরিমান বেশী। নেপথ্যে রয়েছে গত অর্থ বছরের শুরুর দিকেই ফরেণ লিকার ও দেশীয় মদের মূল্য বৃদ্ধি। এ ছাড়া দেশীয় মদ বোতলজাত করণের কারণেও অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন হয়েছে। অনিরিক্ষিত তথ্যনুসারে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কেরুজ ৬টি বিভাগের মধ্যে ৫টিতেঁই মুনাফা অর্জন হয়েছে। চিনি কারখানায় ৬২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লোকসান হলেও ডিস্টিলারী কমপ্লেক্স বিভাগে মুনাফা অর্জন হয়েছে ১৯০ কোটি ২৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। বানিজ্যিক খামারগুলো থেকে মুনাফা অর্জন হয়েছে ৩৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। আকন্দবাড়িয়া পরিক্ষামূলক খামার থেকে মুনাফা অর্জন হয়েছে ৩৩ লাখ ২ হাজার টাকা ও আকন্দবাড়িয়া জৈব সার কারখানায় ৭৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা মুনাফা অর্জন হয়েছে।